Author: Junayd Khan

  • ইসলামি দলগুলোর ঐক্যই বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি: মুফতি ফয়জুল করিম

    ইসলামি দলগুলোর ঐক্যই বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি: মুফতি ফয়জুল করিম

    ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেছেন, দেশের মানুষ এখন বিএনপি-আওয়ামী লীগের বাইরে বিকল্প কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। ইসলামি দলগুলোর ঐক্যই হবে সেই বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি। ইসলাম, মানবতা ও দেশ-এ তিন তত্ত্বের ভিত্তিতে আমরা সেই ঐক্যের প্রত্যাশায় রয়েছি। আমাদের ভেতরে আলোচনাও চলছে। ইনশাআল্লাহ, খুব শিগ্গিরই আপনারা সুখবর পাবেন। যুগান্তরকে রোববার এসব কথা বলেন চরমোনাই পিরের দল হিসাবে পরিচিত ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এই শীর্ষ নেতা। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আগস্ট বিপ্লব-পরবর্তী নানা বিষয় নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বরিশাল ব্যুরোপ্রধান আকতার ফারুক শাহিন।

    যুগান্তর : ইতঃপূর্বের নিরপেক্ষ নির্বাচনগুলোয় দেখা গেছে, প্রাপ্ত ভোটের ৮০-৮৫ শতাংশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির। সেখানে ইসলামি দলগুলোর ঐক্য বিকল্প শক্তি হিসাবে কতটুকু শক্তিশালী হবে?

    ফয়জুল করিম : ৫ আগস্টের আগে যদি সুষ্ঠু একটা নির্বাচন হতো, তাহলে চোখ বন্ধ করে রাষ্ট্রক্ষমতায় যেত বিএনপি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের সেই জনসমর্থন এখন আর নেই। কেন নেই, তা আপনারাও জানেন। ঘুরেফিরে বিএনপি আর আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছে না দেশের মানুষ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো দেখুন, এখন তো আর মতপ্রকাশে বাধা নেই। সাধারণ মানুষ কী কী মন্তব্য করছে। তারা এক ফ্যাসিস্টকে তাড়িয়ে আরেকটিকে ক্ষমতায় আনতে চায় না। আগস্টের লড়াই কারা করেছে? এদেশের ছাত্র-জনতা। তারা কী চায়? সবাই চায় একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ। যেখানে লুটপাট থাকবে না, অবৈধ দখল থাকবে না, হামলা-ভাঙচুর থাকবে না। দেশ চলবে আইনের শাসনে। পুলিশ ও বিচার বিভাগ হবে ন্যায়ভিত্তিক। অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা কি এগুলো নিশ্চিত করতে পেরেছে? একটা কথা মনে রাখবেন-সাতচল্লিশের দেশবিভাগের সময় এদেশের মানুষ যেমন পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, তেমনই সত্তরের নির্বাচনে তারাই আবার পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘না’ বলে দিয়েছে। ২০/২৫ বছর আগে ভোটের পরিসখ্যান কী ছিল, তা বর্তমানের সঙ্গে মেলালে চলবে না। ২০০৮ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ৫৩ বছরের অপশাসনে অতিষ্ঠ মানুষ তাই বিকল্প চায়। সব সরকারের আমলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে, এমন একটা ইসলামি শাসনভিত্তিক দেশ দেখান, যেখানে এমন একটা অভিযোগ আছে? দেশের মানুষ যেমন চাইছে তৃতীয় কারও হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে পরখ করতে, তেমনই আমরাও চাইছি সাধারণ জনগণকে দেখাতে যে একমাত্র ইসলামই পারে সব ধর্ম আর মতের মানুষকে শান্তি-সমৃদ্ধি দিতে।’

    যুগান্তর : জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক মধুর ছিল না। তাদের সঙ্গে ঐক্য হবে কি না?

    ফয়জুল করিম : আমরা তো স্পষ্ট করেই বলেছি, ইসলাম, মানবতা ও দেশ-এ তিন ইস্যুতে একমত সবার সঙ্গেই ঐক্য হবে আমাদের। ইসলামি দলগুলো এ তিন আদর্শের বাইরে নয় বলে বিশ্বাস করি।

    যুগান্তর : এ ধারণায় কি বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হতে পারে?

    ফয়জুল করিম : বিএনপি যদি বলে, ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম ও শরিয়াবিরোধী কোনো আইন পাশ করবে না এবং ইসলাম ও শরিয়াবিরোধী যেসব আইন আছে, তা পর্যায়ক্রমে বাতিল করবে; তাহলে তাদের সঙ্গে ঐক্যে বাধা কোথায়? আমরা আসলে বিগত সময়ে ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর কার্যক্রমে কোনো পার্থক্য খুঁজে না পেয়ে হতাশায় ভুগছি। দেশের মানুষও এ হতাশার বাইরে নয়।

    যুগান্তর : সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চাচ্ছেন কেন?

    ফয়জুল করিম : ১৬ বছর আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশই দেশে প্রথম সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রস্তাব দিয়েছিল। দেখেন, দেশে এমন অনেক রাজনৈতিক দল আছে, যারা আসনভিত্তিক পদ্ধতিতে ভোটের লড়াইয়ে পিছিয়ে থাকে। অথচ দেশের জন্য তাদেরও অনেক কিছু করার আছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে মোট ভোটের ভিত্তিতে তারাও সংসদে গিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে।

    যুগান্তর : সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে কী করবেন?

    ফয়জুল করিম : সেটা নিয়ে তো কাজ চলছে, ইসলামি দলগুলোর এক প্ল্যাটফরমে আসা। এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগের শাসন যেমন দেখেছে, তেমনই বিএনপির শাসনও দেখেছে। দুটোই ফ্যাসিস্টের আলাদা রূপ। আওয়ামী লীগ আমলে যেমন লুটপাট, খুন, জখম, গুম, হামলা, মিথ্যা মামলা, মারধর, নির্যাতন হয়েছে; তেমনই বিএনপির শাসনও কিন্তু সুখকর ছিল না। আজ দেখুন দেশের মানুষ চাইছে বিকল্প কোনো রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আসুক। স্বাধীনতা-পরবর্তী ৫৩ বছর মানুষ যাদের ওপর ভরসা করেছে, তারা সবাই হতাশ করেছে।

    যুগান্তর : যদি ঐক্য বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন কোনোটিই না হয়?

    ফয়জুল করিম : সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের তিনশ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।

    যুগান্তর : আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি প্রসঙ্গে কী বলেন?

    ফয়জুল করিম : কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে আমি নই। তবে গণহত্যা, গুম, খুন আর ফ্যাসিস্টের চরম রূপ নিয়ে যদি কোনো দল প্রতিষ্ঠিত হয়; তাহলে সেই দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না। এমনটা আমি করলে আমার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

    যুগান্তর : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন, সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে আপনার মত কী?

    ফয়জুল করিম : তাদের চেষ্টা আছে ভালো কিছু করার। আমরা সেটিকে সমর্থন যেমন করছি, তেমনই নির্বাচনের ভাবনা থেকেও বেরিয়ে আসছি না। প্রয়োজনীয়, যুক্তিযুক্ত সব সংস্কার সম্পন্ন করে তারা নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় যাবে, এটাই চাওয়া। এটাও তো মানতে হবে যে ১৬/১৭ বছরের জঞ্জাল এক ফুঁতে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। বর্তমানে যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাদের ওপর ভরসা আছে। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। তবে এখনো যারা ফ্যাসিবাদী ভাবনায় আছেন, তাদের নিয়ে শঙ্কা আছে আমাদের। ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া রাষ্ট্রপতি এখনো আসীন। তাকে সরানোর আলোচনা যখন উঠল, তখন দেখা গেল বিরোধিতা। ফ্যাসিস্টদের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতেও বিরোধিতা দেখেছি। ৫৩ বছর পর যখন দেশকে সঠিক পথে আনার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে, তখন সেই সুযোগকে সহায়তা না দিয়ে তড়িঘড়ি ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টাও দেখছি। এর কোনোটিই কিন্তু দেশ কিংবা দেশের মানুষের জন্য ভালো নয়। এসব চেষ্টা পুনরায় ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনার লক্ষণ। আমরা এ শঙ্কার জায়গা থেকে বের হতে চাই। আমরা চাই-দেশ ইসলাম, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি আর মানবাধিকার নিশ্চিত করে এগিয়ে যাক। সেজন্য যা করা দরকার, তা করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

    মুফতি ফয়জুল করিম

  • গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ায় র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি হয়েছে

    গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ায় র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি হয়েছে

    সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা সংস্থা কোয়াককোয়ারেলি সায়মন্ডসের (কিউএস) শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় চমক দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এবার বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান ৫৫৪তম। 

    গতবার সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাবির অবস্থান ছিল ৬৯১ থেকে ৭০০ রেঞ্জের মধ্যে। এবারই প্রথম তা ডিঙিয়ে ওপরের স্থান অধিকার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। র্যাংকিংয়ে বড় পরিবর্তনের কারণ নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। 

    তার মতে, গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়ের উন্নতি হয়েছে। আর এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি করেছে গবেষণা নীতিমালা, সংস্কার করেছে গবেষণায় বরাদ্দ দেওয়ার নীতিমালাও। একই সঙ্গে শিক্ষকদের পদোন্নতির নীতিমালায়ও জুড়ে দেওয়া হয়েছে বিশেষ শর্ত। 

    তিনি কথা বলেছেন, শতবর্ষের পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে। আজকে সাক্ষাৎকারটির চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহাদী হাসান।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে উন্নতি করার জন্য উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) থাকা অবস্থায়েই কাজ শুরু করেছেন উল্লেখ করে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আমি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি গবেষণা নীতিমালা তৈরি করেছিলাম। এতে শিক্ষকরা কীভাবে গবেষণা প্রপোজাল তৈরি করবেন, সে বিষয়ে একটি কাঠামো তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। কী কী শর্ত পূরণ করলে তারা গবেষণার বরাদ্দ পাবেন এবং কীভাবে সেটি ব্যয় করবেন তার দিকনির্দেশনা ছিল। 

    এ ছাড়া যে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ পাবেন, গবেষণা শেষে সেটি প্রকাশনা করা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে আন্তর্জাতিক জার্নালে আমাদের গবেষণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক বছরে আমাদের প্রতিটি শিক্ষকের মাথাপিছু সাইটেশন দুইয়ের বেশি হয়েছে। যেটা আমাদের আন্তর্জাতিক ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করেছে।

    গবেষণায় অর্থে অপচয় হ্রাস করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আগে গবেষণায় অনেক অর্থের অপচয় হতো। এখন আমরা এ জায়গায় একটা শৃঙ্খলা নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। এর ফলে সরকার যে পরিমাণ অর্থ গবেষণার জন্য বরাদ্দ দেন, তা দিয়েও অনেক ভালো গবেষণা করা সম্ভব। আমরা এখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটকেও সুশৃঙ্খল করার জন্য নীতিমালা করেছি। 

    এর আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেন্টারগুলো গবেষণার জন্য যে বরাদ্দ পেত তা ব্যয় করতে পারত না। ফলে আমরা এখন নিয়ম করে দিয়েছি যে, তারা আগে গবেষণার জন্য প্রোপজাল তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেবেন। এরপর এটি যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গৃহীত হয় তাহলে তারা এর জন্য অর্থ বরাদ্দ পাবে, এর আগে নয়।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্যাটেন্ট বিক্রি করতে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও নতুন ইনোভেশন নিয়ে আসছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়-ইন্ডাস্ট্রি কোলাবরেশন করে স্টার্টআপ কোম্পানি করব। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি আরও বেড়ে যাবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের আটলুকের ওপর র্যাংকিংয়ে ৩০ নাম্বার রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিগুলো উন্নত করার জন্য আমরা সরকারের কাছে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা আধুনিক গবেষণা করে প্যাটেন্ট ডেভেলপমেন্ট করতে পারব। আমরা পরিকল্পনা করছি প্যাটেন্ট বিক্রি করার। আসলে যে দেশগুলো অথনৈতিকভাবে উন্নত হয়েছে, তারা শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমেই উন্নতি করেছে। উদাহরণস্বরূপ— জাপান, কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জার্নালগুলো ঢেলে সাজানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক জার্নাল রয়েছে। এগুলোকে আমরা বিখ্যাত জার্নালের আদলে ঢেলে সাজাচ্ছি। আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে গবেষণা প্রকাশনার কাজগুলো করা হতো। এখন আমরা পুরো প্রক্রিয়াটিকে অনলাইন নির্ভর করছি অর্থাৎ অনলাইলে সাবমিশন করবে এবং ইভ্যালুয়েশনও হবে অনলাইনে। এর ফলে নিম্নমানের গবেষণা প্রকাশ এবং চৌর্যবৃত্তি করে গবেষণা প্রকাশ করার আর সুযোগ থাকবে না। এ ছাড়া আমাদের শিক্ষকরা যখন প্রমোশনের জন্য আমাদের কাছে আসছে, তখন তাদের ইমপ্যাক্ট জার্নালে গবেষণা থাকার শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা গবেণা মেলা করেছি এবং ইনোভেশন মেলা করেছি। এসব কর্মকাণ্ডের সব কিছু আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। 

    এ ছাড়া আমরা নিয়ম করে দিয়েছি কেউ যদি কোনো সেমিনার, গবেষণা সংক্রান্ত কনফারেন্স করে, সে সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ওই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও যেন গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে, সে জন্য মাস্টার্স পর্যায়ে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী যাতে থিসিস করে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে করে একজন সুপারভাইজারের আন্ডারে থেকে শিক্ষার্থী যেন হাতে-কলমে গবেষণার কাজ শিখতে পারে।

    র‌্যাংকিংয়ে  আরও উন্নতি করতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের একটি শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা। আমাদের শিক্ষার্থীদের সব কর্মকাণ্ড হলকেন্দ্রিক, কিন্তু হলগুলোতে পড়ার পরিবেশ নেই। এখন তারা যদি হলেই পড়াশোনা না করতে পারে, তাহলে কোথায় করবে। আমরা এখানে গ্র্যাজুয়ালি একটা পরিবর্তন নিয়ে আসতে চাচ্ছি। আমি একজন উপাচার্য হিসেবে মনে করি এটা আমার এবং আমার সহকর্মীদের একটা নৈতিক দায়িত্ব। 

    পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরও আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮০ শতাংশ মফস্বলের। তাদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যই প্রথমে ঢাকায় আসেন। সেখানে তাদের জন্য আধুনিক জ্ঞানার্জনের সুযোগ করে দিতে হবে। তাদের জন্য শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। এ জায়গায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আরও উন্নয়নের জন্য আমাদের শিক্ষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। 

    এ ছাড়া শিক্ষকদের শুধু প্রেশার দিয়ে সব কিছু করা যায় না। প্রেশারের সঙ্গে তাদের ইনসেনটিভের ব্যবস্থাও করতে হবে। আমাদের একটি লাইব্রেরি রয়েছে কিন্তু টাকার অভাবে আমরা সেখানে আধুনিক জ্ঞান আহরণের সুযোগ করে দিতে পারছি না। পাশাপাশি আমরা নতুন নীতিমালা করছি। এতেও শিক্ষকদের মানিয়ে নেওয়া একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ তারা দীর্ঘ দিন গতানুগতিক একটা পদ্ধতির মধ্যে কাজ করেছ। তারপরও আমরা আশা করি অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে আরও ভালো কিছু অর্জন করবে।

  • চালু হচ্ছে ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড

    চালু হচ্ছে ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড

    দেশের কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সম্মাননা জানাতে চালু হচ্ছে ‘ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’।

    এ উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২৪ সালে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের উপর সেরা রিপোর্টের জন্য প্রিন্ট, অনলাইন, টেলিভিশন-এই তিন ক্যাটাগরিতে সাত সাংবাদিককে পুরস্কৃত করা হবে।  
        
    মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়।

    কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের সাংবাদিকদের উৎসাহ দিতে এবং এ খাতকে এগিয়ে নিতে প্রথমবারের মতো যৌথভাবে এ উদ্যোগ নিয়েছে অর্থনৈতিক বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফ ও দেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের পথিকৃৎ ‘প্রাণ’।

    এ উদ্যোগের মাধ্যমে পহেলা মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রতিবেদন থেকে পাঁচ সদস্যের জুরি বোর্ডের মাধ্যমে যাচাই-বাঁছাই শেষে বছরের সেরা ৭টি প্রতিবেদনকে পুরস্কৃত করা হবে। 

    আধুনিক কৃষি ও বাজারজাতকরণের টেকসই ব্যবস্থা, মানসম্মত কৃষিপণ্য উৎপাদন ও সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে এগ্রো প্রসেসিং খাতের প্রসার, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের অগ্রগতি, সমস্যা ও সম্ভাবনা, নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের সরবরাহ ব্যবস্থা, এ খাতের রপ্তানি, সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত নিয়ে করা সেরা প্রতিবেদনগুলো এ উদ্যোগের মাধ্যমে পুরস্কৃত করা হবে।

    এ বিষয়ে ইআরএফ এর সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত রিপোটিংয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ খাতের উপর প্রতিবেদনে যেমন কৃষক উপকৃত হন, তেমনি দেশের কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাতের ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হন, পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যেতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। 

    প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। কৃষি নির্ভরশীল দেশে এ খাত সঠিক দিক নির্দেশনা পেলে দেশের অথনৈতিক উন্নয়নে আরও বড় ভ‚মিকা রাখতে পারে ও পোশাক শিল্পের পর রপ্তানিতে বড় খাত হয়ে উঠতে পারে। এ খাতকে এগিয়ে নিতে সাংবাদিকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছেন। এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।     

    ইআরএফ এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম এর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী সদস্যবৃন্দ ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান তৌহিদুজ্জামানসহ গ্রুপের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

  • ভোট ১০ শতাংশও পড়েছে কিনা সন্দেহ: ড. আসিফ নজরুল

    ভোট ১০ শতাংশও পড়েছে কিনা সন্দেহ: ড. আসিফ নজরুল

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল একাধারে একজন কলাম লেখক, ঔপন্যাসিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের আইন বিভাগ থেকে ১৯৮৬ সালে স্নাতক এবং ১৯৮৭ সালে স্লাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ১৯৯৯ সালে সোয়াস ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর জার্মানির বন শহরের এনভায়রনমেন্টাল ল’ সেন্টার থেকে পোস্ট ডক্টরেট ফেলোশিপ অর্জন করেন। শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের আগে তিনি কিছুকাল সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খালিদ বিন আনিস

    যুগান্তর : এবারের নির্বাচনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

    ড. আসিফ নজরুল : এ নির্বাচনটা হচ্ছে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পনা মতো একটা সাজানো নির্বাচন। এতে সত্যিকার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না, জনগণের পক্ষে কোনো বিকল্প বাছার সুযোগ ছিল না। এ রকম একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য আমার ধারণা, সরকার পরিকল্পনা মোতাবেকই বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে দুটি পদক্ষেপ নিয়েছে। একটা হচ্ছে অবাধে গ্রেফতার, মামলা প্রদান এবং গণহারে সাজা। আর সেকেন্ড হচ্ছে, ২৮ অক্টোবরের পরপরই রাজনীতির মাঠ থেকে বিএনপিকে বিতাড়িত করা। এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে বিএনপি চাইলেও আর নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। কারণ নির্বাচনে অংশ নিতে গেলে দেখা যেত তাদের অধিকাংশ কর্মী হয় জেলে, অথবা সাজা পেয়েছেন। আর সাজা পাওয়ার কারণে হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের ফলে তারা নির্বাচনে অংশই নিতে পারত না। ফলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইলেও পারত না। একটা একতরফা মাঠ সরকার চেয়েছিল, সেটা করে সরকার যেভাবে ক্ষমতায় এসেছে, যেভাবে সংসদে সব আসনই তারা বা তাদের ডামিরা বা অনুগতরা দখল করেছে তা একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার নির্বাচন বলে আমি মনে করি।

    যুগান্তর : অনেক ভোটারই তো এবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। তাহলে কি এটি অংশগ্রহণমূলক হয়নি?

    আসিফ নজরুল : অনেক ভোটার কি ভোট দিয়েছে? এখানে সিইসি বলেছেন ২৭ শতাংশের মতো, তারপর উনি এক ঘণ্টা পর বলেছেন ৪০ শতাংশ। আমার মতে, এটা করে কৌশলে নির্বাচনে ২৭ শতাংশ, নাকি ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে, এ ধরনের একটা বিতর্কের জন্ম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসলে বিতর্কটা হওয়া উচিত, নির্বাচনে আসলে ২৭ ভাগ ভোট পড়েছে, নাকি আরও অনেক কম পড়েছে। আমার ব্যক্তিগত যে পর্যবেক্ষণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব খবর দেখি, আশপাশের লোকজন থেকে যেসব কথা শুনি, তাতে আমার তো মনে হয় ১০ শতাংশও ভোট পড়েছে কিনা, সন্দেহ আছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ছবি আমরা দেখেছি, যেখানে শিশুরা ভোট দিয়েছে, এক ব্যক্তি অনেক ভোট দিয়েছে। একাধারে একটা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। কাজেই এ নির্বাচনে আসলে কতটা ভোট পড়েছে, সেটা একটা গবেষণার বিষয়। আমার মনে হয় না, নির্বাচনে এমন ভোট পড়েছে যেটাকে আমরা সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল বলতে পারি।

    যুগান্তর : এ নির্বাচন গণতন্ত্রের জন্য কী কল্যাণ বয়ে এনেছে? না এনে থাকলে ভবিষ্যতে এর প্রভাব কী হতে পারে?

    আসিফ নজরুল : গণতন্ত্রের জন্য এ নির্বাচন কোনোই কল্যাণ বয়ে আনছে না। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে বহু মতের চর্চা। বিশেষ করে সংসদে সত্যিকারের বিরোধী দলের উপস্থিতি এবং এটা হচ্ছে সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারে এরকম প্রতিষ্ঠানগুলোর উপস্থিতি। এ তিন দিক দিয়েই গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এ নির্বাচনে জনগণের বিকল্প বাছার সুযোগ ছিল না। এবারের সংসদে প্রকৃত কোনো বিরোধী দল থাকবে না, এটা আপনারা সবাই জানেন। এরা হয় সরকারের অনুগত অথবা সরকারের ডামি অথবা সরকারি দলে যোগদানে ইচ্ছুক। কাজেই এরা কখনোই সরকারকে কোনোরকম জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন না। আর এরকম একতরফা নির্বাচন হলে রাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানগুলো থাকে, সেগুলো সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়ে, অনুগত হয়ে পড়ে। যেমন, এ ধরনের সরকারগুলোতে আপনি দেখবেন, গত দুই টার্মের সরকারের আমলে যে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যেমন ব্যাংক লুটপাট করার ঘটনা, প্রকল্প অতিমূল্যায়িত করার ঘটনা, শেয়ার মার্কেট লুটপাট হওয়ার ঘটনা-এগুলোর কোনোটারই সুষ্ঠু তদন্ত করবে না দুদক। বা করলেও সেটা খুব কম ক্ষেত্রে নামেমাত্র করবে; কিন্তু ১৫ বছর আগে বা ২০ কিংবা ২৫ বছর আগে কী দুর্নীতি হয়েছে, তারা দেখবেন যে বিপুল বিক্রমে দশগুণ উৎসাহ নিয়ে তা খুঁজতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। অর্থাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারের দুর্নীতির দিকে নজর রাখার চেয়ে সরকারের সহায়ক হিসাবে বিরোধী দলগুলোর আমলে কী হয়েছিল, তাতেই উৎসাহী হবে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকেই এটা করতে দেখা যায় ভুয়া ও একতরফা নির্বাচনের পর।

    যুগান্তর : নির্বাচনের পর আমরা দেখেছি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাদে বিদেশি অনেক রাষ্ট্রই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছে। তাহলে কি এ নির্বাচন বিদেশি মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি?

    আসিফ নজরুল : এ নির্বাচনকে বিদেশিদের কারা শুভেচ্ছা জানিয়েছে বা কারা এতে আপত্তি তুলেছে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমি এগুলোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি দেশের মানুষের প্রতিক্রিয়া। বিদেশিরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানায় বিভিন্ন স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে। সেটা যে কোনো দেশ, ভারত হোক, পাকিস্তান হোক বা আমেরিকা হোক, তারা যত কথাই বলুক, তাদের কাছে নিজের দেশের স্বার্থ আগে, তারপরে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ। ফলে তারা যে খুব নির্মোহভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বা হয়নি, এ ধরনের মন্তব্য করে, সেটা আমার সবসময় মনে হয় না। আবার তারা যেটা বলে, সেটা যে কূটনৈতিক ভাষা হিসাবে বলে, নাকি মিন করে, সেটা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। যেমন আপনি জানেন যে অনেক সময় এ ধরনের নির্বাচনে জিতে আসার পর বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বলে, আমরা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বা সরকারের সঙ্গে কাজ করব। সরকারের সঙ্গে ‘বিজনেস অ্যাজ ইউজুয়াল’ কাজ করা বা নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করা আর সরকারকে মেনে নেওয়া কিংবা নির্বাচনের প্রশংসা করা এক জিনিস না। আমরা যারা নির্বাচনটা নিয়ে প্রশ্ন তুলি, এ নির্বাচন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বশীল কিনা প্রশ্ন তুলি, এমনকি কেউ কেউ এ ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে আসা সরকারগুলো বৈধ কিনা সে প্রশ্ন তুলি, আমরা কি এ সরকারকে মেনে নিই না? আমরা কি ট্যাক্স দেই না? আমরা কি এ সরকারের নিয়ম-কানুন মেনে নেই না? আমরা কি এ সরকারের আমলে নাগরিক দায়িত্ব পালন করি না? তো মেনে নেওয়া, নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করা আর বৈধতার স্বীকৃতি দেওয়া এক জিনিস না। এখন বিদেশিরা ভবিষ্যতে কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে-না দেখাবে, সেটার চেয়েও আমার অনেক বেশি প্রত্যাশা থাকবে, সরকারের শুভ বোধোদয় হোক বা বাংলাদেশের মানুষ সরকারকে এ বোধোদয় ঘটাতে বাধ্য করুক। সেটা আমার কাছে অনেক বেশি ইতিবাচক মনে হবে।

    যুগান্তর : একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই কি সর্বোৎকৃষ্ট? এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা কি আদৌ আছে? যেহেতু এ প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দল দুই মেরুতে অবস্থান করছে।

    আসিফ নজরুল : বাংলাদেশের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবশ্যই সর্বোৎকৃষ্ট; কিন্তু এটার কোনো বিকল্প নেই, আমি তা মনে করি না। এ বিকল্পগুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। একটা তো হতেই পারে নির্বাচনকালীন সরকার। যেখানে ক্ষমতাসীন সরকারও থাকবে, বিরোধী দল থাকবে। যেহেতু সংসদে বিরোধী দল নামেমাত্র, এজন্য সংসদের বাইরে থেকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী থাকবে, ওয়ান-টেন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী থাকতে পারে। এছাড়া অনির্দিষ্টসংখ্যক টেকনোক্র্যাট উপদেষ্টা কিংবা সংসদের বাইরে থাকা দলগুলোর মধ্য থেকেও উপদেষ্টা থাকতে পারে। এটা নিয়ত ভালো থাকলে করা যেতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু বিষয়, যেমন বাংলাদেশে হয় কী, এই ৫-১০ শতাংশ বেশি ভোট পেলেই দেখা যায় একটা দল দুশ-সোয়া দুশ আসনে জিতে আসে। এবং আরেকটা দল দেখা যায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ কম ভোট পেয়েছে, এজন্য সে মাত্র ৩০ থেকে ৫০টা আসন পায়। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ, দুটো দলের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা অতীতে ঘটেছে। আবার দেখা যায়, কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছোট ছোট দল আছে, যেমন সিপিবি’র মতো দল, তারা হয়তো দুই শতাংশ ভোট পেল; কিন্তু সংসদে তার কখনো প্রতিনিধি থাকে না। এখন এসব সমস্যার সমাধান করা যায়, যদি আমরা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করতে পারি। অর্থাৎ কোনো নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ পায় ৩০ শতাংশ ভোট, তাহলে আওয়ামী লীগ পাবে ৩০ শতাংশ সংসদে আসন। বিএনপি যদি পায় ৩০ শতাংশ ভোট, তাহলে বিএনপি সংসদে পাবে ৩০ শতাংশ আসন। যদি সিপিবি পায় দুই শতাংশ ভোট, তাহলে সংসদে তাদের আসন থাকবে দুই শতাংশ। আবার নুরুল হক নূরের দল যদি পায় তিন শতাংশ ভোট তাহলে সংসদে তার থাকবে তিন শতাংশ আসন। এটা করা গেলে সব দলের জন্য একটা উইন উইন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ধরনের শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আমরা করতে পারি নাকি, এসব বিকল্প এখন থেকেই খুব সিরিয়াসলি ভাবা দরকার।

    যুগান্তর : একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ের বিষয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতার পেছনে কী কী ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

    আসিফ নজরুল : বিরোধী দলগুলোর ব্যর্থতা-ত্রুটি নিয়ে অনেক প্রশ্ন তোলার সুযোগ এখন আবার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সবসময় জানি যে, বিজয়ীর প্রশংসা সবাই করে আর বিজিতের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বের করে। এটাও বলা হচ্ছে, বিএনপির একটা ‘প্ল্যান বি’ থাকা দরকার ছিল। সরকার যদি কোনোভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না মানে তাহলে অন্য কোনো বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া যায় কিনা, মানে সর্বদলীয় সরকারের, এ ধরনের চিন্তা থাকা প্রয়োজন ছিল। এরকম অনেক কিছু বলা যেতে পারে। বিএনপির বিভিন্ন ইস্যুতে আরও জনসম্পৃক্ত হওয়া উচিত ছিল। এরকম আরও অনেক কিছু বলা যেতে পারে। তবে এ নির্বাচন ঠেকাতে বিরোধী দল যে ব্যর্থ হলো, এটার মূল কারণ কিন্তু বিরোধী দলের জনসম্পৃক্ততা কম, আগ্রহ কম, কর্মসূচি কম ছিল-এটা আমি মনে করি না। এর মূল কারণ হচ্ছে সরকারের নিপীড়ন এবং দমন নীতির সক্ষমতা। আমি সবসময় বলি, এ সরকার আগের যে কোনো সরকারের তুলনায় দমন-নিপীড়নমূলক কাজে অনেক বেশি দক্ষ হয়েছে। ১৫ বছরে দিনে দিনে এ দক্ষতা আরও বেড়েছে। এছাড়া এ সরকার ঐতিহাসিকভাবে ভারতের সমর্থন পেয়ে আসে, কারণ এ সরকারের আমলে ভারতকে অনেক বেশি কিছু দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ভারতকে এমন কিছু দিয়েছি, যা তারা কখনো ভুলবে না। এত সুবিধা দেওয়া হয়েছে যে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখা ভারত তার স্বার্থে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করে। এখানে ভারত একটা অত্যন্ত শক্তিশালী রোল প্লে করেছে। এসব কারণ উপস্থিত থাকার বাস্তবতায় বিরোধী দলের পক্ষে আসলেই কতটুকু করার ছিল, কতটুকু করার ভবিষ্যতে আছে, সেটা এখনই চট করে বলা যাবে না। আমি মনে করি, অবশ্যই বিরোধী দলের ‘সোল সার্চিং’-এর প্রয়োজন আছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে বিকল্প খুঁজে নেওয়া বা সমান্তরাল পথ খুঁজে নেওয়াই হচ্ছে বিরোধী দলের দায়িত্ব। তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য অভিজ্ঞতার আলোকে কী কী করতে পারে, বর্তমান অভিজ্ঞতার আলোকে কী কী করতে পারে, এটা আসলে তাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে, বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলতে হবে। মুক্তভাবে তাদের সমালোচনাগুলো শুনতে হবে। তবে এর পাশাপাশি আমাদের সমাজে যারা কথা বলি, তাদের এবং গণমাধ্যমের উচিত এ নির্বাচনটা হয়ে যাওয়ার পেছনে বিরোধী দলের ব্যর্থতা খোঁজার পাশাপাশি সরকারি দলের নিপীড়নযন্ত্র কীভাবে কাজ করেছে, সেটাও হাইলাইট করা।

    যুগান্তর : আপনাকে ধন্যবাদ।

    আসিফ নজরুল : ধন্যবাদ।