Google search engine
Homeঅন্যান্যধর্মপ্রচন্ড শীতে যখন অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম জায়েজ

প্রচন্ড শীতে যখন অজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম জায়েজ

ঠান্ডা পানি দিয়ে অজু বা গোসল করা যদি কারো জন্য ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে দেখতে হবে পানি গরম করার ‍সুযোগ আছে কি না। পানি গরম করার সুযোগ থাকলে তার কর্তব্য পানি গরম করে অজু-গোসল করা। পানি গরম করার ‍সুযোগ থাকার পরও তায়াম্মুম করা বৈধ হবে না।

যদি পানি গরম করার কোনো রকম সুযোগ না থাকে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে অজু-গোসল করলে তীব্র শীতে তার মৃত্যু, অঙ্গহানি বা অসুস্থ হয়ে পড়া বা অসুখ বেড়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে যেমন- কো‌নো অঙ্গ অবশ হ‌য়ে যাওয়া, বু‌কে ঠান্ডা লে‌গে যাওয়া, জ্বর বা স‌র্দি দেখা দেওয়া, এলা‌র্জিক সমস্য‌া, বাত-ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি বে‌ড়ে যাওয়া ইত্যাদি, তাহলে তার জন্য অজু-গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা জায়েজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡهُ مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ

তোমরা যদি অসুস্থ হও অথবা সফরে থাক, যদি তোমাদের কেউ মলত্যাগ করে আসে অথবা যদি স্ত্রী সহবাস কর তারপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি নাও এবং তোমাদের মুখ ও হাত তা দিয়ে মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নেয়ামত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর। (সুরা মায়েদা: ৬)

অজু ও গোসলের পরিবর্তে এক নিয়মেই তায়াম্মুম করতে হয়। তায়াম্মুমের নিয়ম হলো, তায়াম্মুমের নিয়ত করে মাটি বা মাটিজাতীয় বস্তু যেমন বালু, পাথর, চুন ও সুরমা ইত্যাদি কোনো কিছুতে দুবার হাত লাগানো, একবার হাত দিয়ে মুখ মাসাহ করা, আরেকবার কুনুই পর্যন্ত উভয় হাত মাসাহ করা।

তায়াম্মুম অজু-গোসলের বিকল্প এবং অজু গোসল যে সব কারণে ভাঙে, সে সব কারণ যেমন মলমুত্র ত্যাগ ইত্যাদি কারণে তায়াম্মুমও ভাঙে। এ ছাড়া যে কারণে তায়াম্মুম করা হয়েছিল, তা দূর হয়ে গেলেও তায়াম্মুম ভাঙে। উল্লিখিত ক্ষেত্রে শীত কমে গেলে বা পানি গরম করার সুযোগ সৃষ্টি হলে তায়াম্মুম ভেঙে যাবে।

উল্লেখ্য, কনকনে শীত, বৃষ্টি বা এ রকম কোনো কারণে অজু করা কষ্টকর হলে ওই সময় অজুর সওয়াবও বেড়ে যায়। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন সমবেত সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলবো যে আমল করলে আল্লাহ গোনাহসমূহ মাফ করে দেবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? তারা বললেন, ’অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসুল!’

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন,

إِسْبَاغُ الوُضُوءِ عَلَى المَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الخُطَا إِلَى المَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ

কষ্টকর অবস্থায় পরিপূর্ণরূপে অজু করা, দূরত্ব অতিক্রম করে মসজিদে যাওয়া, এক ওয়াক্তের নামাজ আদায় করে পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। (সহিহ মুসলিম: ৪৯৪)

তাই কনকনে শীত আমাদের জন্য গুনাহ মাফ, আল্লাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য ও অনুগ্রহ লাভের বিশেষ সুযোগও নিয়ে আসে। প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজের জন্য অজু করা তো অবশ্য কর্তব্য। পাশাপাশি সারাদিনই অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা উচিত। আর শীত ও গরম সব অবস্থায়ই অজু করা উচিত ধীরে-সুস্থে, উত্তমরূপে, তড়িঘড়ি করে দায়সারাভাবে নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের তওফিক দান করুন!

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments